Sunday, May 20, 2007

খুচরামি - 1

1.
তুমি আজ বাতাসের অক্সিজেন হয়ে গেছ, সুরঞ্জনা। আমার সীমাবদ্ধতার চোখে দেখি না তোমায় আর; হয়তো ভুলে যাই তোমার অস্তিত্বও; অথচ তুমি আছো, সর্বক্ষণ - সময়ের মতো স্থির, প্রবহমান, অবিনশ্বর। গ্লানিময় পৃথিবীর জঞ্জাল যখন জীবন নামক রঙবেরঙের ভাঁড়টার গলাটিপে ধরে প্রচন্ড আক্রোশে, দম বন্ধ হয়ে আসে আমার সমস্ত অস্তিত্বের, নারীর সি্নগ্ধ হাতের মতো স্পর্শ করো তুমি আমায়, মিশে যাও আমার রক্তে, আমার অস্তিত্বে; আমি আবার গান গেয়ে উঠি বেঁচে থাকার তীব্র আনন্দে।...... ইতিহাসের পাতা ভরে ওঠে সত্যিমিথ্যে কাহিনীর জঞ্জালে।

2.
পাগলামির চরম সত্যটা কাব্যিক মিথ্যের দুর্বল আবর্জনার নিচে চাপা পড়ে যায় এমনভাবে, মনে হয়, জীর্ণ পৃথিবী কখনো আলোর মুখ দেখে নি, ভোলেনি কখনো সৃষ্টির প্রখর আকাঙক্ষায়।অসহ্য অবাস্তবতা শূন্য প্রসংশার, মেকি শ্রদ্ধার মালা গলায় দিয়ে বাঁদর নাচ নাচে; হাতে তালি দেই আমরা - অবুঝ তবুও। আলো আঁধারির অন্তহীন সখ্যতার সাক্ষী হয়ে থাকে ঘরে ফেরা বকের দু'একটা ঝরা পালক; আর কেউ না। বিধাতা নিঃশব্দে হাসে। প্রকৃতি নিশ্চুপ।

3.
তুমি আমার হাতটা ধরতে পারো নিঃশব্দে। হিপোক্রেসির খুঁটিটা শক্ত অনেক এখন। তোমাকে ভালোবাসি।

চোরের গতানুগতিক প্রেমকাহিনী: লাবণীর চোখ

তারপর আমি সময়ের হাত ধরে হেটে চলি। পিছন ফিরে তাকাইনা আর। ওই দুটো চোখের দিকে তাকানোর সময় এখন আমার আর কই!

অনেক বছর পরে দেখা হলো লাবণীর সাথে। নতুন গোফ ওঠা বয়স থেকে লাবণীর সাথে মেলামেশা আমার। বরাবরই ভাল ছাত্রী ছিলো ও। আমি মাঝারি মানের। বন্ধুদের সাথে হল্লা করার বাইরে যে সময়টুকু থাকতো, মধ্যবিত্ত বাবা-মায়ের মুখ চেয়ে তখনই শুধু বইয়ের সাথে আলাপ হতো। কলেজ পেরিয়ে লাবণী ভর্তি হলো বুয়েটে। আমি টেনেটুনে ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্ট্যাটিস্টিক্স।

প্রচন্ড ব্যস্ত ও তখন। যোগাযোগ কমে এলো আমাদের। জীবনে এই প্রথম ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা এলো। সে ভাবনা শুধুই হতাশার। একসময় জড়িয়ে পরলাম ছাত্ররাজনীতিতে। আর দশটা বোকা মানুষের মত সাহসটা বরাবরই ভালো ছিলো আমার। থাকা-খাওয়া ফ্রি, সাথে নগদ মালেরও আমদানি হতে থাকলো।

হতাশাটা যায়নি তখনো। এ এক অনিশ্চিত জীবন। খুব খারাপ লাগলে লাবণীর সাথে দেখা করতে যেতাম। বুয়েটে ছাত্রী হলে থাকতো ও। বিকেলে ঘোরা আর নিরিবিলি প্রেম করার জন্য বুয়েট ক্যাম্পাসের বিকল্প নেই। মাঝে মাঝে কাকের অযাচিত প্রসাদে সিক্ত হওয়া ছাড়া।TSCটা এড়িয়ে চলতাম। একগাদা ্বন্ধুবান্ধবের সানি্নধ্যে লাবণীকে যে দেখা হবেনা আমার।

সময়ের ঘড়ি আমার জন্য বসে থাকেনি। একের পর এক ইয়ার লস দিয়েছি। রাজনীতির সিড়ি ভাংগা হয়েছে; কিন্তু পরীক্ষার বেড়া ডিংগানো হয়নি আমার। বুয়েটের পড়া শেষ করে লাবণী চলে যায় USA তে। সাবি্বর ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে ওর। সময়কে মেনে নিতে শিখেছি আমরা ততোদিনে।

আমার সময় তখন একরাশ কালি দিয়ে বাচ্চাছেলের খেয়ালিপনায় আকা কোন ছবি যেন। সরকার change হয়েছে, হল থেকে হয়েছি বিতাড়িত। কাটাবন মার্কেট, পলাশী বাজার আর ইউনিভার্সিটির টেন্ডার এখন অন্য চাদাবাজদের দখলে। ক্যাম্পাসে যাই না, প্রাণের ভয়টা বেড়েছে অনেক। কিশোর বেলার সেই বুকের মধ্যে টগবগে সাহসটা উধাও হয়ে গেছে নিজের অজান্তে। রিভলবারহীন আমি এখন রাস্তার পাশের নেড়ি কুত্তাটি হয়ে গেছি।

পরিস্থিতে একটু স্বাভাবিক হলে আবারো মনে পড়েছে বুড়ো মধ্যবিত্ত মা-বাবার কথা। একটু একটু করে ফিরে এসেছি স্বাভাবিক জীবনে। একসময় পড়াশুনা শেষ করেছি। তারপরে যথারীতি কেরানি।লাবণীর সাথে যোগাযোগ কমতে কমতে একসময় শূন্যের কোঠায় পৌছেছে। এবার দেশে এসে ফোন করেছিলো লাবণী। কার কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার পেয়েছে কে জানে।

আবারো ইউনিভার্সিটি এলাকা, ফুলার রোড,TSC, শহীদ মিনার ঘুরে লাবণীর বুয়েট ক্যাম্পাস। কাকগুলো একটু নির্জীব হয়ে গেছে যেন। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছ ততক্ষণে। জ্বলে উঠেছে রাস্তার পাশের বাতিগুলো। আমাকে এতটা সময় লাবণী কেন দিচ্ছে, কে জানে!

আমরা তখন বুয়েট শহীদ মিনারে বসেছি। পুরোণো একটা লোভ আমাকে পেয়ে বসলো।
- লাবণী, তোমার চোখদুটো একটু দেখতে পারি?
- sure.

কত সহজ আর সাবলীল ও!আজ থেকে আট বছর আগে এতোটা সহজে পাইনি এটা। Requestএর পরে Requestকরতে হয়েছে।
- লাবণী, মাত্র 10টা মিনিট। নড়বে না। পলক ফেলবে না। আমি তোমার দু'চোখ দেখবো আমার সমস্ত সত্তার নিরবিচ্ছিন্ন concentration দিয়ে।
- ধ্যাৎ, কি হচ্ছে এসব! লাবণীর কপট উত্তর। অবশেষে আত্মসমর্পণ।

তার দু'চোখের অপার সৌন্দর্যে আমার অবগাহন।আজ আমি লাবণীর সেই চোখদু'টোকে খুজছি। স্বামী আর ফুটফুটে রানিয়াকে নিয়ে আজ কত সুখের সংসার IBM Austin এর Employeeলাবণী আহমেদ এর। কিন্তু সেই চোখদুটোকে পাচ্ছি না আর। সেই আকাশের স্বপ্নঘেরা জ্বলজ্বলে চোখদুটোতে এখন রাজ্যের ক্লান্তি!

একটা অব্যক্ত কষ্টের ঝড় আমাকে এলোমেলো করে দেওয়ার আগ মুহূর্তে সামলে উঠি আমি। কেন কষ্ট পাবো হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের শোকে! এই লাবণী আর সেই লাবণীর মাঝে বয়ে গেছে কত সহস্র সময়ের সমুদ্্র।

আমাদের জীবন যেন সময়ের অনিশেঃষ ক্যানভাসে কোন এক অদ্ৃশ্য শিশুর ইচ্ছের খেয়ালে আকা কোন আদিগন্ত ছবি। ছবিটা পরিবর্তন করা যায় না, যায় না পিছন ফেরা আর। আমি তাই চলে যাবো সময়ের হাত ধরে সামনে, নতুন কোন ছবি আকবে সময়। ওই চোখদু'টোকে খুজবো না আর।